
স্টারলিঙ্ক Direct to Cell: মোবাইল নেটওয়ার্কের ভবিষ্যত, আর বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়ে?
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মোবাইল কানেক্টিভিটির যেসব সীমাবদ্ধতা আছে, তার অন্যতম হলো দুর্গম ও গ্রামীণ অঞ্চলে সিগন্যাল না থাকা। ঠিক এই সমস্যার সমাধান আনতে এলন মাস্কের কোম্পানি SpaceX এর স্যাটেলাইট-ইন্টারনেট সেবা Starlink এক যুগান্তকারী ফিচার চালু করেছে – Direct to Cell।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে, মোবাইল টাওয়ার ছাড়াই আপনি আপনার সাধারণ ৪জি ফোন ব্যবহার করে সরাসরি স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারবেন। এটা যেন সেলফোন প্রযুক্তিতে এক বিপ্লব!
কী এই Direct to Cell?
স্টারলিঙ্কের Direct to Cell (D2C) এমন একটি প্রযুক্তি যা কোনো বাড়তি যন্ত্র ছাড়াই আপনার বিদ্যমান ৪জি এলটিই ফোনকে স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কে যুক্ত করে। এর ফলে আপনি থাকুন না কোনো পাহাড়ের কোলে, দ্বীপের ভেতরে, কিংবা নেটওয়ার্কবিহীন এলাকায় — আপনার ফোনে থাকবে কানেকশন।
বিশ্বের কোথায় কোথায় চালু হয়েছে?
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজিল্যান্ড – এখানে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে বেটা সংস্করণে টেক্সটিং সেবা চালু হয়েছে।
- কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, জাপান, চিলি, পেরু, ইউক্রেন – ২০২৫ সালের মধ্যেই ভয়েস ও ডেটা সেবা চালুর জন্য বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব সম্পন্ন হয়েছে।
- ভবিষ্যতে আরও দেশ এই সার্ভিসে যুক্ত হবে।
বাংলাদেশে স্টারলিঙ্কের যাত্রা
বাংলাদেশে ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) স্টারলিঙ্ককে Non-Geostationary Satellite Orbit (NGSO) লাইসেন্স প্রদান করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে সেবা শুরু হয়, যা ২০ মে ২০২৫ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত Direct to Cell ফিচার বাংলাদেশে চালু হয়নি, এবং কবে নাগাদ চালু হবে – সে সম্পর্কে এখনো কোনো নির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি।
বাংলাদেশের জন্য D2C-এর তাৎপর্য
বাংলাদেশের হাজারো প্রত্যন্ত গ্রাম, চরাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা, উপকূল — এসব জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্ক এখনও দুর্বল। Direct to Cell প্রযুক্তি চালু হলে:
- 📞 সবার কাছে থাকবে যোগাযোগের সুবিধা
- 🚑 দুর্যোগকালীন সময়ে বাড়বে রেসকিউ কার্যকারিতা
- 📲 গ্রামীণ শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তারা পাবেন নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট
- 🌾 কৃষি ও IoT প্রযুক্তির নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে
এটা ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
তাহলে এখন করণীয় কী?
- সাধারণ ব্যবহারকারীদের এখনই কিছু করতে হবে না – শুধুমাত্র ৪জি ফোন থাকলেই ভবিষ্যতে সেবা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
- নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে স্টারলিঙ্কের D2C সেবা দ্রুত অনুমোদন ও অংশীদারিত্ব তৈরি করা।
উপসংহার
স্টারলিঙ্কের Direct to Cell প্রযুক্তি শুধু প্রযুক্তির অগ্রগতি নয়, এটি মানবিক প্রয়োজন পূরণের এক দিগন্ত। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে কানেক্টিভিটি পৌঁছে দিতে এটি হতে পারে ইতিহাসের অংশ।
আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই বাংলাদেশের আকাশে ভেসে থাকা স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট শুধু ব্রডব্যান্ড নয়, মোবাইলের টাওয়ারহীন কানেকশনও নিশ্চিত করবে।
তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব চলছে – আপনি প্রস্তুত তো?
মন্তব্য নেই! একটি মন্তব্য লিখুন।