
১৫ বছরে লুট ২ লাখ কোটি, ডুবছে ব্যাংক!
গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতে ভয়াবহ লুটপাট ও অব্যবস্থাপনার চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের নাকের ডগায় থেকে বিভিন্ন সময় সুবিধা নেওয়া একটি প্রভাবশালী মহল অন্তত ২০টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকার মূলধন হাতিয়ে নিয়েছে।
২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে এসব ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে আগের প্রান্তিকের তুলনায় তিন মাসে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা বেড়ে। আগের প্রান্তিকে ঘাটতি ছিল ৫৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। যদিও কিছু ব্যাংকে উদ্বৃত্ত থাকায় সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের শেষে মূলধন ঘাটতি ছিল ১০টি ব্যাংকে ৩৯ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এই ঘাটতি প্রায় তিন গুণ বেড়ে গেছে।
বড় ঘাটতির তালিকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জনতা ব্যাংক একাই ঘাটতি দেখিয়েছে ৫২ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এছাড়া:
-
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক: ১৮,১৯৯ কোটি
-
ইউনিয়ন ব্যাংক: ১৫,৬৯০ কোটি
-
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ১৩,৯৯১ কোটি
-
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ: ১২,৮৮৫ কোটি
-
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: ১১,৭০৯ কোটি
-
আইএফআইসি ব্যাংক: ৯,০২৯ কোটি
-
ন্যাশনাল ব্যাংক: ৭,৭৯৯ কোটি
-
রূপালী ব্যাংক: ৫,১৯২ কোটি
-
পদ্মা ব্যাংক: ৪,৯৮৫ কোটি
-
অগ্রণী ব্যাংক: ৪,৬৮৬ কোটি
এছাড়া বেশ কিছু প্রাইভেট ও বিদেশি ব্যাংকেও উল্লেখযোগ্য ঘাটতির চিত্র উঠে এসেছে।
খেলাপি ঋণও বেড়েছে রেকর্ড হারে
২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। এক বছরে এই ঋণ বেড়েছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণ অবলোপন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা এবং পুনঃতফসিল করা হয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১২২ কোটি টাকা।
‘অরাজকতার ফসল’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লোকসান বয়ে বেড়ানো এসব ব্যাংকের সমস্যা এখন প্রকাশ পাচ্ছে। অতীতে সরকার-ঘনিষ্ঠতার কারণে তা গোপন রাখা হয়েছিল। মূলধন ঘাটতি হলে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়, ঋণ বিতরণ সক্ষমতা কমে এবং বিদেশি ব্যাংক লেনদেনে অনাগ্রহ দেখায়।
অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, “গত ১৫ বছরে দেশে যে আর্থিক অরাজকতা তৈরি হয়েছে, তা অভাবনীয়। প্রায় ৩০টি ব্যাংক ভালো অবস্থানে নেই। এমনকি অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে।”
পরিণতি ভয়াবহ, সমাধান জরুরি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে অবিলম্বে:
-
ঋণ আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ,
-
মূলধন পুনর্গঠন পরিকল্পনা,
-
দুর্নীতির দায়ে সংশ্লিষ্টদের বিচার এবং
-
নতুন উদ্যোক্তা ও সুশাসন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
না হলে শুধু ব্যাংক খাত নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি পড়বে মারাত্মক ঝুঁকিতে।
মন্তব্য নেই! একটি মন্তব্য লিখুন।